
দেশের ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে চরম তারল্য সংকট, যার ফলে অধিকাংশ ব্যাংক নিরুপায় হয়ে স্বল্পমেয়াদি বা কলমানি ঋণের ওপর নির্ভর করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এই তারল্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরের ব্যবধানে কলমানি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে একদিনের জন্য নেওয়া ওভার নাইট ধার বেড়েছে প্রায় ৪৯ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আর আন্তঃব্যাংক রেপোতে ঋণ বেড়েছে ৫৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার ঘাটতি পূরণে এই চড়া সুদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ এখন নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে কলমানি মার্কেটে ধার নেওয়া হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা, যা গত বছরের অক্টোবর মাসে ছিল ৮০ হাজার ২৩ কোটি টাকা। কলমানির গড় সুদের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯.৭৪ শতাংশ, যেখানে শর্ট নোটিশ ও টার্ম কল ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি। ব্যাংকগুলোর মধ্যে কিছু শক্তিশালী ব্যাংক অতিরিক্ত তারল্য ধরে রাখলেও দুর্বল ব্যাংকগুলো প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে এবং চড়া সুদে ধার নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো নিলাম কমিয়ে দেওয়ায় এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি জানিয়েছেন, বাজারে তারল্য কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো একে অপরের কাছ থেকে বেশি সুদে টাকা ধার করছে, যা ব্যাংক খাতের জন্য উদ্বেগজনক।
অন্যদিকে, বিশেষ তারল্য সহায়তা (এসএলএফ) সুবিধা এক বছরের ব্যবধানে ৫২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা কমে মাত্র ১৮ হাজার ১৮৬ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে টাকার মান কমে যাওয়ায় কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে এবং তারা কলমানি মার্কেটে নির্ভর করছে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে।
সিএনআই/২৫