ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালক এম এ খালেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে কোম্পানির কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা। রোববার (২৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আত্মসাৎ হওয়া অর্থ উদ্ধারের দাবিতে একটি স্মারকলিপিও জমা দেন দুদকে।
গাজীপুর অফিসের ইনচার্জ এজিএম মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা কোম্পানি থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি জানান, তিনি ১৮ বছর ধরে ফারইস্টে চাকরি করছেন, কিন্তু এখন গ্রাহকদের ম্যাচিউর হওয়া টাকার অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। গ্রাহকরা বিভিন্ন জায়গায় তাদেরকে টাকার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করছেন—অফিস, আদালত, বাড়ি, বাজার এমনকি মসজিদেও। তিনি অভিযোগ করেন, চার বছর ধরে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ সম্ভব হয়নি এবং কর্মচারীরাও কয়েক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই বীমা কোম্পানি ২০১৯ সালে সরকারকে ১,৯০০ কোটি টাকা কর প্রদান করেছিল, তবুও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
কোম্পানির টঙ্গী জোনের ইনচার্জ আখতার হোসেন বাবু বলেন, কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন এবং সেই টাকায় শিল্প-কারখানা ও সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। তিন বছর ধরে কর্মচারীরা কোনো বেতন পাচ্ছেন না, গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না, ফলে নতুন গ্রাহকরাও পলিসি নিচ্ছেন না। এতে করে কর্মচারীরা কমিশন থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
অভিযোগকারীরা জানান, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রাহকদের অবদানে কোম্পানির তহবিলে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা জমা হয়। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এম এ খালেক নিজেদের লোক বসিয়ে ভুয়া খরচ, কাগুজে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনার কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। তারা দাবি করেন, সেই অর্থের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক তাদের প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন এবং প্রতিদিন অফিসে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে নজরুল ইসলামকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। গত ৩১ জুলাই দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ঢাকার তোপখানা রোডের একটি জমি ও স্থাপনা অনিয়মের মাধ্যমে ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় কেনাবেচা করেন।
সিএনআই/২৫