রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ঘটনা অনুসন্ধান করে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি মাসের ১৪ অক্টোবর "বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, রংপুর" নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলা হয়। পেজটিতে প্রকাশিত পোস্টগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থনমূলক নানা প্রচারমূলক বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজন সক্রিয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জুলাই-আগস্টে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বর্তমানে অনলাইনে সক্রিয় রয়েছেন। এদের মধ্যে সাবেক সভাপতি পোমেল বড়ুয়া এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থেকে পোস্টে লাইক-কমেন্ট দিচ্ছেন এবং শেয়ার করছেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, "জুলাইয়ের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশের। কিন্তু এখনো দেখা যাচ্ছে সেই স্বৈরাচারের দোসররা নানা উপায়ে আবারও সক্রিয় হচ্ছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক।"
তিনি আরও বলেন, "বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূতিকাগার। অথচ সেই ক্যাম্পাসেই এখন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পুনরুত্থান হচ্ছে। এটা কখনোই মানা যায় না। অনলাইনে অপপ্রচার চালিয়ে তারা ভয়-আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।"
আরেক শিক্ষার্থী জানান, "গত ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুবার্ষিকী ও 'জুলাই শহীদ দিবস' এর দিন আমরা দেখেছি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের স্লোগান দেয়ালে লেখা হয়েছিল। এরপর প্রশাসন থেকে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করলেও আজ পর্যন্ত তার ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।"
তিনি অভিযোগ করে বলেন, "প্রশাসনের নীরবতা ও উদাসীনতার কারণেই আজ নিষিদ্ধ সংগঠনটি আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অনলাইনে তাদের নামে পেজ খোলা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটি স্পষ্টতই ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা তৈরির একটি পরিকল্পিত চেষ্টা।"
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে 'সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯' এর আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংগঠনটি "রাষ্ট্রবিরোধী, ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে" জড়িত ছিল।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই হত্যা, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার উপর সরাসরি হামলা, সহিংসতার সাথে জড়িত ছিল। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দাবির প্রেক্ষিতে সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়।
এদিকে, বেরোবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পুনরুত্থান ও অনলাইন অপপ্রচার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দ্রুত তদন্তের ফলাফল প্রকাশ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
রাকিবুল হাসান মুন্না
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
সিএনআই/২৫