নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জ এখন আর আগের মতো ব্যস্ত নেই। একসময় এখান থেকে দেশের ৪০টির বেশি জেলায় খাদ্যপণ্য সরবরাহ হতো। এখন মিল–কারখানার অর্ধেক বন্ধ, গুদাম ফাঁকা, ক্রেতা কম, শ্রমিকেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
আগে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে আটা-ময়দা, চিনি, ডাল, তেলসহ খাদ্যপণ্য ওঠানো–নামানোর কাজ চলত। এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। জয় ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ বাবু বলেন,
“আগে শতাধিক ট্রাক মাল লোড-আনলোড হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বিদেশ থেকে গম, চিনি, সয়াবিন আমদানি করে সরাসরি সুপারশপ ও পরিবেশকদের কাছে সরবরাহ করছে। ফলে নিতাইগঞ্জের পাইকাররা টিকতে পারছেন না।
ভাই ভাই ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক পরিতোষ সাহা বলেন,
“নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সোনালি সময় ছিল। এখন ৩০–৪০ ট্রাকও আসে না। করপোরেট কোম্পানিগুলো বাজার দখল করেছে।”
নিতাইগঞ্জের ব্যবসা কমে যাওয়ায় স্থানীয় অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। ব্যাংক লেনদেন অর্ধেকে নেমে এসেছে, শত শত শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।
৩৮ বছরের পুরোনো শ্রমিক দুলাল হাওলাদার বলেন,
“আগে কাজ সামলানো যেত না, এখন অর্ধেক কমে গেছে। অনেকেই অন্য পেশায় চলে গেছেন।”
যানজট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও ডলার সংকটে ব্যবসা আরও দুর্বল হয়েছে। এখানকার ৭২টি ফ্লাওয়ার মিলের অর্ধেকই বন্ধ। অটো ফ্লাওয়ার মিল সমিতির সভাপতি ওয়াজেদ আলী বাবুল বলেন,
“নিতাইগঞ্জের অস্তিত্ব টিকবে কিনা সন্দেহ। আগে যেভাবে চলত, এখন সেই প্রাণ নেই।”
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আহমেদুর রহমান বলেন,
“নিতাইগঞ্জ দেশের পাইকারি ব্যবসার ঐতিহ্য। সরকার যদি ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা ও সহজ ঋণ না দেয়, তাহলে এটি ইতিহাসে পরিণত হবে।”
সিএনআই/২৫