আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের শেষ ১২ দিন: গিটার হাতে গানের মানুষটির বিদায়যাত্রা
বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর জীবন যেন ছিল গানেরই আরেক নাম। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই সংগীতশিল্পী কৈশোর থেকেই গান ও গিটার নিয়েই বেঁচে ছিলেন। ১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা হাতে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি, আর সেখান থেকেই শুরু হয় এক সোনালি অধ্যায়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের কণ্ঠ, সুর আর গিটারের ঝংকারে তিনি হৃদয় জয় করেছেন কোটি ভক্তের। কিন্তু ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর, মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চিরতরে নিস্তব্ধ হয়ে যায় সেই গিটারের সুর।
জীবনের শেষ দিকে শরীর ভালো যাচ্ছিল না আইয়ুব বাচ্চুর। চিকিৎসকেরা তাঁকে বিশ্রাম নিতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ গানপাগল মানুষ। ২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারে বেসিসের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ইয়ুথ ফেস্ট’-এ অংশ নেন। রাত করে বাসায় ফিরলেও ক্লান্তি যেন তাঁর কাছে তুচ্ছ।
পরদিন, ৭ অক্টোবর চিকিৎসকের পরামর্শে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। হৃদ্রোগের জটিলতায় সিসিইউতে ছিলেন ১১ অক্টোবর পর্যন্ত। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সরাসরি যান এলআরবির স্টুডিও ‘এবি কিচেন’-এ, যেখানে ব্যান্ডের সদস্য মাসুদের সঙ্গে খানিক সময় কাটান।
১২ অক্টোবর একদিন বিশ্রাম নিয়ে ১৩ অক্টোবর সকালে উড়ে যান প্রিয় চট্টগ্রামে। ওই দিন জিইসি কনভেনশন সেন্টারে ছিল তাঁর শেষ কনসার্ট। সেটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ মঞ্চে গান গাওয়া রাত।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে নতুন এক গিটার কেনার পরিকল্পনা করেন তিনি। স্টুডিওতে চারটি নতুন গিটার পৌঁছায়, সেখান থেকে ৬৫ হাজার টাকায় একটি গিটার বেছে নেন। সেটাই ছিল তাঁর জীবনের শেষ গিটার—যেটির সুরে তিনি নিজের অমর ছাপ রেখে যান।
১৬ অক্টোবর রংপুরে তাঁর জীবনের শেষ কনসার্ট হয়। সেদিন মঞ্চে গেয়েছিলেন ‘এক আকাশে তারা তুই’ ও ‘আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’। যেন গানের কথাই পরিণত হলো বাস্তবে—দুদিন পরই উড়াল দিলেন আকাশে, সুরের ওপারে।
২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর চট্টগ্রামের বাইশ মহল্লা চৈতন্য গলি কবরস্থানে মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি রেখে গেছেন অগণিত ভক্ত, অসংখ্য অমর গান ও এক অনুপ্রেরণাদায়ক জীবনগাথা—যা আজও তরুণ প্রজন্মকে শেখায়, সত্যিকারের শিল্পী কখনো মরে না, তাঁর সুর চিরকাল বেঁচে থাকে।
সিএনআই/২৫