বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিশোর সাহিত্য সিরিজ ‘তিন গোয়েন্দা’-এর স্রষ্টা, প্রজন্মের পর প্রজন্মের প্রিয় লেখক রকিব হাসান আর নেই। বুধবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে কিডনির ডায়ালাইসিস চলাকালীন সময়ে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর ১০ মাস।
লেখক ও সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মূর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
রকিব হাসান ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকেই তিনি স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পরবর্তীতে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের নিয়মমাফিক জীবন তাঁকে টানেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকেই জীবনের প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নেন।
লেখালেখির সূচনা হয় সেবা প্রকাশনী থেকে। প্রথম দিকে তিনি বিশ্বসেরা ক্লাসিক বই অনুবাদ করে সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তীতে নিজস্ব ধাঁচে লিখেছেন টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজাসহ অসংখ্য জনপ্রিয় সিরিজ। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা চার শতাধিক।
তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় — তিনি ‘তিন গোয়েন্দা’র জনক।
এই সিরিজ বাংলাদেশের কিশোর সাহিত্যকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যায়। তিন বন্ধু কিশোর, মুসা ও রবিনের অভিযানভিত্তিক গল্প শুধু কিশোর নয়, বড়দের মনেও জায়গা করে নেয়।
মূলত রবার্ট আর্থারের ‘The Three Investigators’ সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হলেও, রকিব হাসানের হাতে এটি পায় একেবারে বাংলাদেশি রূপ ও ভাষার আবেদন। তাঁর লেখায় শুধু রহস্য নয়, ছিল বন্ধুত্ব, সাহস, বুদ্ধিমত্তা আর একধরনের কিশোর রোমাঞ্চের মিশেল।
রকিব হাসান নিজ নামে যেমন লিখেছেন, তেমনি বিভিন্ন ছদ্মনামেও অসংখ্য অনুবাদ ও মৌলিক রচনা প্রকাশ করেছেন। ‘শামসুদ্দীন নওয়াব’ নামে তিনি অনুবাদ করেন জুল ভার্ন-এর বিখ্যাত বিজ্ঞান কল্পকাহিনিগুলো, যা পাঠকসমাজে আজও সমান জনপ্রিয়।
২০২১ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,
“আমার কাজটাই হলো, যেটা তুঙ্গে ওঠে, সেটা ছেড়ে দেওয়া। আমি সব সময় নতুন কিছু করতে ভালোবাসি।”
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা গল্পকার নন — তিনি কৈশোরের এক অংশ, এক আবেগের নাম। তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলো দেশের অসংখ্য তরুণকে পাঠাভ্যাসে যুক্ত করেছে, অনেককেই অনুপ্রাণিত করেছে লেখালেখিতে।
তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লেখক, পাঠক ও ভক্তদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে তাঁকে স্মরণ করছে নস্টালজিক প্রজন্ম — যাদের বেড়ে ওঠা কেটেছে তিন গোয়েন্দার পাতায় পাতায়।
সিএনআই/২৫