বাংলাদেশের আগামী রাজনীতিতে এনসিপি (ন্যাশনাল কনফেডারেশন পার্টি) নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আগামীর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এনসিপি হবে মূল নির্ধারক শক্তি।”
মঙ্গলবার দুপুরে নেত্রকোনা শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম, কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম সোহাগ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম খানসহ স্থানীয় নেতারা।
সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারেনি। অন্যদিকে জামায়াত দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও জনগণের ব্যাপক সমর্থন পায়নি। সে জায়গায় এনসিপি এখন বাস্তব বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই গণতন্ত্র ও সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। গণ–অভ্যুত্থানের সময় এনসিপি যে ভূমিকা রেখেছিল, সেটিই এখন আমাদের শক্তির ভিত্তি।”
প্রতিবেশী ভারতের প্রভাব প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, “ভারতের আধিপত্যবাদ এখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় বিষয়। বিএনপি বা জামায়াত কেউই তা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারেনি। কিন্তু এনসিপি দেশীয় স্বার্থ রক্ষায় আরও বাস্তব ও দৃঢ় ভূমিকা নিতে সক্ষম হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি স্থিতিশীল সরকার চাই, যা এনসিপির সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম ব্যাখ্যা দেন, “‘সেফ এক্সিট’ বলতে আমরা বুঝি না কারও বিচার থেকে পালানোর সুযোগ। জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যে ফ্যাসিস্ট সরকার পতিত হয়েছে, তাদের অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করাই হবে এনসিপির অঙ্গীকার।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি না দিলে কেউ এক্সিট পাবে না। এটি বাস্তবায়ন করা সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, “আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। সংস্কার ও বিচার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে যারা প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে জোটে যেতে পারি। তবে এনসিপি অন্য দলের প্রতীক বা নামে নির্বাচন করবে না, নিজেদের শাপলা প্রতীকেই লড়বে।”
শাপলা প্রতীক না পেলে কী হবে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী, শাপলা প্রতীক আমরা পাবই। এই প্রতীকেই এনসিপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।”
সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার সময় কিছু সেনা কর্মকর্তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। এখন এসব অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত। সেনাবাহিনী যেন এসব খুনিদের দায়ভার না নেয়—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
সংবাদ সম্মেলনের পর সারজিস আলম জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভায় অংশ নেন। সেখানে দলীয় সাংগঠনিক পরিকল্পনা ও নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়ে এনসিপি জনগণের পাশে থেকে একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠনে কাজ করবে।”