রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় একটি টিনের দোকান নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বদরগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার কাছে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম লাভলু মিয়া (৫০)। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান। তাঁর ছেলে রায়হান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতদের মধ্যে নয়জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং অন্যরা বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাকির মুবাশ্বির জানান, আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায়ও গুরুতর আঘাত রয়েছে।
সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় একটি টিনের দোকানকে ঘিরে। ব্যবসায়ী জাহিদুল হক দোকানটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইসতিয়াক হোসেনের কাছ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ভাড়া নিয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু ইসতিয়াক হোসেন তাঁকে দোকান ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন এবং বুধবার রাতে হামলা চালিয়ে তাঁকে আহত করা হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা ১১টার দিকে জাহিদুল হকের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনের প্রস্তুতির সময় ইসতিয়াক হোসেনের অনুসারীরা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন, এবং দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী।
এই সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, তাঁর শিশুকন্যা মাহরিন (৮) আহত হয়। এছাড়াও পথচারীদের আরও তিনটি গাড়িতে হামলা হয়।
ঘটনার জন্য একে অপরকে দায়ী করছে দুই পক্ষ। সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার দাবি করেন, তাঁর অনুসারী লাভলু মিয়াকে কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক ও তাঁর ছেলে তমালের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়েছে। তবে শহিদুল হক এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত নন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, টিনের দোকান ঘিরে বিএনপির দুইটি পক্ষ বিভক্ত হয়ে পড়ে—একদিকে মোহাম্মদ আলী সরকার ও হুমায়ুন কবীর, অন্যদিকে শহিদুল হক ও সারোয়ার জাহান।
সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপটেন মেহেদী জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত করা হচ্ছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, পুরো ঘটনা একটি দোকান ঘিরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা মাঠে রয়েছে এবং লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনার পর স্থানীয় জনগণের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় মহল।