মোসা: ফারজানা ইশরাতঃ ঈদ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই নতুন জামা, হরেক রকম খাবার, আর সকালবেলার সেই অপরূপ খুশির অনুভূতি। এখনকার ব্যস্ত জীবনের ঈদে আনন্দ থাকলেও ছোটবেলার ঈদ ছিলো এক অন্যরকম ভালোবাসায় মোড়ানো,নির্ভেজাল উচ্ছ্বাস ও আনন্দের ছোঁয়া।
ছোটবেলা রমাদানের দিন গণনার মাধ্যমেই শুরু হয়ে যেত আমাদের ঈদের আনন্দ। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা, নতুন জামা কেনা, আর মজার খাবার তৈরির ধুম শুরু হতো। বাজার থেকে সেমাই, দুধ, মাংসসহ নানান কেনাকাটা চলতো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। সেসময়ের চাঁদ রাত মানেই ছিল আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে ভরা এক জাদুকরি রাত। চাঁদ দেখার অপেক্ষা, নতুন জামা গুছিয়ে রাখা, হাত ভর্তি মেহেদি আর বন্ধুদের সঙ্গে রাতভর মজা—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। মায়ের রান্নার ঘ্রাণ, ভাইয়া-বাবাদের আতর-টুপি কেনা আর ঈদের দিন কত টাকা সালামি পাবো সে হিসাব করতে করতেই কখন যে রাত কেটে যেত, টেরই পেতাম না। মা-বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে নতুন জামা কেনার আনন্দ ছিল অসাধারণ। নতুন জামা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া, বন্ধুদের দেখানোর জন্য অপেক্ষা – সবকিছুতেই ছিল এক অন্যরকম উত্তেজনা।
ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে নতুন জামা পরে নিতাম। আতর মেখে, হাতভর্তি মেহেদির রঙ নিয়ে,নতুন জামা পড়ে সবাইকে ঈদ মোবারক বলার সেই মুহূর্তগুলো আজও মনে গেঁথে আছে। সবাইকে জড়িয়ে ধরা, বড়দের সালাম করা, আর সবার কাছ থেকে সালামি পাওয়া ছিল ঈদের সবচেয়ে আনন্দের অংশ।
ঈদের দিনে মায়ের হাতের সেমাই আর রকমারি মিষ্টি খাবারের স্বাদ ছিলো অসাধারণ। ঈদের খাবারে থাকতো সেমাই, পায়েস, ফিরনি আর রোস্ট-কোরমার রাজকীয় আয়োজন। সকাল শুরু হতো মিষ্টি খাবার দিয়ে, আর দুপুরে থাকে বিরিয়ানি, রেজালা কিংবা খাসির মাংসের স্পেশাল কিছু। পরিবার-পরিজন মিলে একসঙ্গে এসব খাবার উপভোগ করার আনন্দ আজও চোখে ভাসে।
ঈদের দিনে খেলাধুলা ও ঘুরাঘুরিও ছিলো দারুণ আনন্দের।সকালে নামাজের পর ভাইয়াদের বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা ঘুড়ি ওড়ানোতে দিনটা জমে উঠতো। আমরা বোনেরা সবাই মিলে বিকেলে নতুন জামা পরে আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া, মেলায় যাওয়া কিংবা পার্কে ঘুরতে যাওয়া – সব মিলিয়ে ঈদের দিনটা রঙিন হয়ে উঠতো।
ঈদের রাত মানেই সারাদিনের আনন্দের পর পরিবারের সঙ্গে গল্প গুজবের এক সুন্দর সময়। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই মিলে একসঙ্গে বসে নানান ঈদের গল্প, আত্মীয়-স্বজনের স্মৃতি আর নানা মজার ঘটনা শেয়ার করা, সমবয়সীরা একত্রিত হয়ে আড্ডা দেওয়া, সিনেমা দেখার মাধ্যমে আনন্দে কাটতো ঈদের রাত।
এখন বড় হয়ে গেলেও সেই ছোটবেলার ঈদের নির্মল আনন্দ আর ভালোবাসার মুহূর্তগুলো মনের কোনে রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই দিনগুলোতে, যেখানে ঈদ মানেই ছিল এক অপার আনন্দের উৎসব।