সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আমরা যেন নিজেরা ভেদাভেদ সৃষ্টি না করি, বরং ঐক্যবদ্ধ থাকি। যদি আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা বা ব্যত্যয় থেকে থাকে, তাহলে তা আলোচনা করে সমাধান করা উচিত।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে, ২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে শহীদ হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সেনাপ্রধান বলেন, "আজ একটি বেদনাবিধুর দিন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা ৫৭ জন চৌকস অফিসারসহ কিছু পরিবারের সদস্যদেরও হারিয়েছি। অনেকেই হয়তো ছবিতে এই ঘটনার ভয়াবহতা দেখেছেন, কিন্তু আমি এই বর্বরতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। একটি বিষয় আমাদের স্পষ্টভাবে মনে রাখতে হবে—এই নৃশংসতা কোনো সেনা সদস্য ঘটায়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এখানে কোনো ‘ইফ’ বা ‘বাট’ নেই। যদি এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে এতদিন ধরে চলা বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। আমাদের উচিত এই বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তা বাধাগ্রস্ত না করা।”
তিনি আরও বলেন, "যেসব সদস্য শাস্তি পেয়েছেন, তারা তাদের অপরাধের জন্য যথাযথ শাস্তি পেয়েছেন। এখানে কোনো রাজনৈতিক নেতা বা বাহ্যিক শক্তি জড়িত ছিল কি না, তা নির্ধারণের দায়িত্ব কমিশনের। তারা তদন্ত করে আপনাদের জানাবেন। আমাদের শহীদ সেনা সদস্যরা তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছেন—এটি পরিষ্কার সত্য। তবে আমরা কেউ কেউ এই বিষয়টিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, যা আমাদের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না।”
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আমি আপনাদের কিছু উপদেশ দিতে চাই—আমরা যেন নিজেদের মধ্যে বিভক্ত না হই, বরং ঐক্যবদ্ধ থাকি। যদি কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। এ নিয়ে অযথা দৌড়ঝাঁপ বা বিভ্রান্তি কোনো সুফল বয়ে আনবে না, বরং নিজেদের ক্ষতি করবে।”
তিনি আরও জানান, "কিছু সদস্য দাবি করছেন, ২০০৯ সাল থেকে তারা অন্যায়ভাবে শাস্তি পাচ্ছেন। এ বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আমি একটি বোর্ড গঠন করেছি, যেখানে একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বোর্ড প্রথম ধাপে ৫১ জন সদস্যের বিষয়ে সুপারিশ করেছে, যার অধিকাংশ আমি গ্রহণ করেছি এবং আরও কিছু সংশোধন যুক্ত করেছি। একইভাবে, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে, কেউ অপরাধ করলে তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এটি একটি ডিসিপ্লিনড ফোর্স, এবং এর শৃঙ্খলা বজায় রাখা সবার দায়িত্ব।”