পবিত্র মাহে রমজান দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে বাজারে শুরু হয়েছে রমজান উপলক্ষ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা। তবে এবার বাজারে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র—অন্য বছরগুলোর তুলনায় কিছু পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কমেছেও। এতে খুশি ক্রেতারা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের শুল্ক কমানোর ফলে ছোলা, খেজুর, বেসনের মতো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি: ছোলা-খেজুরের দাম সহনীয়
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাড্ডা ও রামপুরার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোলার দাম আগের চেয়ে কিছুটা কম। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগেও ১২০-১২৫ টাকা ছিল। বুটের ডাল ১২০ টাকা, মুগডাল ১৭০ টাকা, চিনি ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বুটের বেসন ১৫০-১৬০ টাকা এবং অ্যাংকর বেসন ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে চিড়া ও মুড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে, আর বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট এখনো কাটেনি।
লেবুর দাম বাড়লেও খেজুরে স্বস্তি
বাজারে লেবুর দাম এক লাফে পিসপ্রতি ২০ টাকা হয়ে গেছে। তবে খেজুরের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে না।
মেডজুল খেজুর: ১৪০০-১৪৫০ টাকা কেজি
মরিয়ম খেজুর: ১১৮০-১২৫০ টাকা
আজোয়া খেজুর: ১০৫০ টাকা
মাশারুক খেজুর: ৭০০-৮০০ টাকা
সুগাই খেজুর: ৯৫০ টাকা
ডাল খেজুর: ৬৫০ টাকা
দাবাস খেজুর: ৪৬০-৪৮০ টাকা
জাহিদি খেজুর: ২০০-২৬০ টাকা
বরই খেজুর: ৪৮০ টাকা
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা মওদুদ আহমেদ জানান, রোজার সময় খেজুরের দাম সাধারণত দ্বিগুণ হয়ে যায়, তবে এবার দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তিনি বলেন, "২০-৫০ টাকা বেড়েছে ঠিকই, তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। সরকার শুল্ক মওকুফ করায় বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা যায়নি।"
অন্যদিকে, মধ্যবাড্ডার রফিকুল ইসলাম জানান, "ছোলা ১১৫ টাকা, বেসন ১৫০ টাকায় কিনেছি। তবে তেল নিতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। খেজুরের দামও এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে।"
ব্যবসায়ীদের মতামত
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম বাড়ার কারণ নেই। কামরুল ইসলাম, খন্দকার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক, বলেন, "ছোলা, বেসন, ডাল আগের দামে আছে। পাইকারি বাজারে দাম না কমলে খুচরা বাজারেও কমবে না। তবে বড় কোনো মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।"
মদীনা খেজুর অ্যান্ড মধু শপের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন বলেন, "জানুয়ারিতে খেজুরের দাম কমেছিল, ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা বেড়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম এখনো কম।"
সরবরাহ ও মজুত পরিস্থিতি
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক ছোলা চাহিদা ১.৫ লাখ টন, যার মধ্যে রমজানে চাহিদা থাকে প্রায় ১ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ২.২৬ লাখ টন ছোলা আমদানি হয়েছে, যা রমজানের চাহিদার চেয়ে ৫০% বেশি।
খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৯০,০০০ থেকে ১ লাখ টন, যার মধ্যে রমজানে লাগে ৫০-৫৫ হাজার টন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৬ দিনে ৩১,৬৪৩ টন খেজুর আমদানি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় রমজানের সময় পণ্যের দাম বড় ধরনের বাড়বে না। তবে সরকার যদি পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়ায়, তাহলে আরও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
রমজানকে সামনে রেখে সাধারণত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে, কিন্তু এবার ছোলা ও খেজুরের বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ভোজ্যতেলের সংকট কিছুটা উদ্বেগজনক। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও কঠোর নজরদারি বাড়ালে ক্রেতাদের জন্য আরও স্বস্তি আসতে পারে।