২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে নাজুক পরিবেশ: রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্র ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। দেয়ালে বাসা বেঁধেছে তেলাপোকা, যা হাসপাতালটিকে তেলাপোকার অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নানা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের।
তেলাপোকার দখলে হাসপাতাল
বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বিছানার চাদরের নিচে অসংখ্য তেলাপোকা বাসা বেঁধেছে। খাবার থেকে মেঝে, এমনকি রোগীদের আশপাশেও তেলাপোকার বিচরণ। শুধু তাই নয়, অনেক রোগী ও স্বজন তেলাপোকার কামড়ের শিকার হয়েছেন। আতঙ্কে অনেকেই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রোগীরা
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডসহ অন্যান্য ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই নজরে পড়বে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ ও পড়ে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট। পরিচ্ছন্নতার অভাবে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ রোগী ও স্বজনরা। মেডিসিন ও গাইনিসহ বিভিন্ন বিভাগের শয্যার আশপাশও অপরিচ্ছন্ন। সংলগ্ন দেয়াল ও সংরক্ষিত জিনিসপত্রের জায়গাগুলোতেও তেলাপোকার উপদ্রব লক্ষ করা গেছে।
রোগী ও স্বজনদের ক্ষোভ
রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে একই চিকিৎসক কর্মরত থাকায় বদলির অভাব দেখা দিয়েছে। অনেকে হাসপাতালের পাশের প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়মিত বসেন, ফলে হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না।
আরিফ নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, "অসুস্থ রোগী থাকার বেডে যদি তেলাপোকা থাকে, তাহলে মানুষ কীভাবে সুস্থ হবে? রাতের বেলায় তেলাপোকা কানে বা মুখে ঢোকার চেষ্টা করে, যা আতঙ্কজনক।"
হাসপাতালে ভর্তি নাজমা নামের এক রোগী বলেন, "বাতাস হলেই দুর্গন্ধে বমির ভাব আসে। এত নোংরা পরিবেশে সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়।"
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসক বলেন, "হাসপাতালের চারপাশের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নাক-মুখ বন্ধ করে ঢুকতে হয়। রোগী ও স্বজনদের অসচেতনতার কারণেও ওয়াশরুম ও ওয়ার্ড দ্রুত অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।"
কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সাজ্জাদ হায়দার শাহীন বলেন, "অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিয়মিত কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন, তবে আরও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রয়োজন।"
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা. ফিরোজ জামান বলেন, "জনবল সংকটের কারণেই এমন পরিস্থিতি। আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। অতিরিক্ত রোগীদের সেবা দিতে হলে এ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করা প্রয়োজন।"
সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন
সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা, ব্যবস্থাপনা ও জনবল সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তা না হলে রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা পেতে আরও ভোগান্তিতে পড়বেন।