রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনের নৈশভোজে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের অবস্থান ও সুযোগ-সুবিধা এক অনন্য আশীর্বাদ। শুধু এগুলো আহরণ করা আর কাজে লাগানো দরকার। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এই প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে।"
ডিসি সম্মেলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তজার্তিক সম্মেলন কেন্দ্রে বার্ষিক এ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
১৯৮৭ সালে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে একটি সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠের স্মৃতি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘গ্রোয়িং আপ উইথ জায়ান্টস’ নামে সেই প্রবন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘জাতি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান চমৎকার—দুই পাশে দুই মহাশক্তি, ভারত ও চীন। তারা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। আমরা যেহেতু মাঝখানে আছি, আমাদের ফেলে যেতে পারবে না।
“তাদের বাতাসে আমরাও উড়তে থাকব। সেই থেকে আমার বদ্ধমূল ধারণা, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল তার অবস্থানের কারণে।”
তিনি বলেন, “তখন দুই মহাশক্তির কথা বলেছিলাম, এখন আর দুই মহাশক্তির কথা বলি না। এখন চার মহাশক্তি। আমাদের সামনে বিস্তীর্ণ মহাসাগর। আমাদের উপকূলভূমি সাগরের সঙ্গেই লাগোয়া। এটি এক বিশাল সুযোগ।
“পৃথিবীর দরজা আমাদের জন্য খোলা। আমরা এতদিন এটি ব্যবহার করতে জানিনি। এখন যেই মুহূর্তে এর ব্যবহার শুরু করব, আমাদের অর্থনীতিকে লোহার দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখলেও আটকানো যাবে না।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আমাদের উত্তরে সেই বিখ্যাত হিমালয় পর্বতমালা, যেখানে জমে আছে বিপুল শক্তি—হাইড্রো পাওয়ার। আমাদের যত শক্তি দরকার, সব ওখানে জমা আছে, হারিয়ে যাচ্ছে না।
“শুধু নেওয়ার অপেক্ষায়, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির অপেক্ষায়, যাতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে যে দূরত্বটুকু আছে, তা অতিক্রম করা যায়।”
ইউনূস বলেন, “নেপাল বারবার বলছে, ‘আমাদের নিয়ে যাও, আমরা প্রস্তুত’। কিন্তু মাঝখানে ওইটুকু পথ অতিক্রমের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আশা করি, তাদেরই অর্থনৈতিক কারণে তারা আমাদের সেই সুযোগ দেবে।
"আমরা মহাসৌভাগ্যবান এক জাতি আমাদের অবস্থানের কারণে। তাহলে এই জাতির দুঃখ কেন থাকবে? এটা কি আমাদের কপালের দোষ, চরিত্রের দোষ, নাকি চিন্তার দোষ? যদি হয়ে থাকে, তাহলে সেগুলো থেকে মুক্ত হতে হবে।"
তিনি বলেন, ‘‘আজ কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত যে উপকূলভূমি রয়েছে, সেখানে যদি কাতারে কাতারে নৌবন্দর স্থাপন করা যায়, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যদি বিশ্বের সব জাহাজকে আশ্রয় দেওয়া যায়, তাহলে আমাদের আটকাবে কে?
“আমাদের উত্তরে নেপাল। তাদের সৌভাগ্য, তারা হিমালয় পর্বতের পাদদেশে আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো তারা সমুদ্রের দেখা পায় না। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে দেখতে হবে।”
তিনি বলেন ‘‘ভুটানের অবস্থাও একই। তাদেরও সমুদ্র দর্শনের সুযোগ নেই। তাদের সমুদ্র দেখতে হলে আমাদের মাধ্যমে আসতে হবে। তেমনিভাবে ভারতের পূর্বাঞ্চল—সেভেন সিস্টারস—তাদের অবস্থাও একই। তাদের সমুদ্র দর্শন হয় না।
‘‘আমরা একসঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সমুদ্রবন্দর দিয়ে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া হবে, আমাদের মালামালও চলবে। এতে আমাদের অর্থনীতি এবং তাদের অর্থনীতি একসঙ্গে সমৃদ্ধ হবে।”
তিনি বলেন, "আমাদের সামনে বিশাল সম্ভাবনা। সবচেয়ে বড় সম্পদ আমাদের বিশাল জনসংখ্যা। আগে মনে করতাম এটি একটি বোঝা। এখন বুঝতে পারছি, এটি আসলে একটি মানবসম্পদ।”
নার্সিং কলেজ স্থাপনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, "বাংলাদেশে আমরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যদি একটি করে নার্সিং কলেজ যুক্ত করা হয়, তাহলে মেয়েরা ও ছেলেরা প্রশিক্ষিত হয়ে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারবে। এই চাহিদা কখনোই শেষ হবে না।"