ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটক, মুক্তিপণের ফাঁদে দালাল চক্র
ইতালিতে পাঠানোর নামে লিবিয়ায় আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে মধ্যস্থতাকারী মোজাম্মেল হোসেন ও ঢাকা হাওলাদার ট্রাভেলস-এর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের পরিবারের অভিযোগ, মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের পরও তাদের স্বজনদের মুক্তি দেওয়া হয়নি।
এছাড়া, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার অসহযোগিতা এবং আসামিদের পক্ষ নিয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ‘মানবপাচার মামলার তদন্ত নিয়ে পুলিশের গড়িমসি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা এসব অভিযোগ তোলেন।
ভুক্তভোগী মাসুম মোল্যার ভাই আশরাফুল মোল্যা জানান, আসামি মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর তার মাধ্যমে ১৮ লাখ টাকার বিনিময়ে বৈধ উপায়ে ইতালিতে লোক পাঠানোর প্রস্তাব পান। এরপর ১১ ডিসেম্বর গুলশানের একটি অফিসে মৌখিক চুক্তি হয় এবং ৩ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে আরও ১৫ লাখ টাকা পরিশোধের পর ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ মাসুম মোল্যা দুবাই হয়ে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। দুবাই পৌঁছানোর পর জানানো হয়, ৫ দিন পর ইতালির ফ্লাইট দেওয়া হবে। তবে পরে তাকে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আটকে রেখে পরিবারের কাছে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
আশরাফুল মোল্যা বলেন, মার্চের ২৪ তারিখে মাসুম মোল্যা লিবিয়া থেকে ফোন করে জানান, দালালরা তাকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করছে। তখন দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
তিনি আরও জানান, দালাল চক্রের হাতে মোট ৩৫ লাখ টাকা দেওয়ার পরও তার ভাইকে মুক্ত করা হয়নি। এরপর মামলা করলে আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।
পুলিশের গড়িমসি ও হুমকির অভিযোগ
ভুক্তভোগীর ভাই আশরাফুল বলেন, চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি গুলশান থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি আদালত প্রধান আসামি মোজাম্মেল হোসেনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. পলাশ হোসেন আসামিকে কার্যকরীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।
তিনি অভিযোগ করেন, এসআই পলাশ মামলার ৪ নম্বর আসামি নওশেদ শিকদার-কে গ্রেপ্তারে অনীহা প্রকাশ করেন। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে গুলশান থানার এসআই মশিউরের সহযোগিতায় নওশেদ শিকদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগীদের হুমকি ও অতিরিক্ত মুক্তিপণের দাবি
অন্য ভুক্তভোগী রিপন শিকদারের বাবা সাদেক শিকদার জানান, ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে তার কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নেওয়া হয়। পরে ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
তিনি বলেন, "আমি কোনোভাবে ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করি, কিন্তু চার মাস হয়ে গেলেও ছেলেকে মুক্ত করা হয়নি। এখন আবার ২০ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। টাকা না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।"
ভুক্তভোগীরা সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ এবং দালাল চক্রের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।