গাজা নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা: আরব দেশগুলোর বিরোধিতা ও অনিশ্চয়তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা ভূখণ্ড নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি গাজার নিয়ন্ত্রণ চান এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সেখানে পুনর্গঠনের কাজ করতে চান।
মঙ্গলবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প গাজার প্রসঙ্গে বলেন, "আমরা এর মালিকানা চাই। প্রথমে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে, জমি সমান করব এবং বোমা ও অস্ত্র অপসারণ করব।"
ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা ও আরব বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারেন। তিনি জর্ডান ও মিসরকে আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। তবে উভয় দেশই এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
মিসর ও জর্ডান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশে স্থানান্তর করবে না। মিসরীয় সংবিধান অনুযায়ী, বিদেশি পুনর্বাসন প্রকল্প নিষিদ্ধ, এবং জনগণ এটিকে ফিলিস্তিন-বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখে।
বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া ও পরিকল্পনার অস্পষ্টতা
জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষক স্তেফান রোল বলেন, "মিসর ফিলিস্তিনিদের আলাদা রাষ্ট্রের দাবিকে সমর্থন করলেও, নিজ দেশে পুনর্বাসন চায় না।"
আম্মানে পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ এডমুন্ড রাতকার মতে, "ট্রাম্পের এই অবস্থান জর্ডানের জন্য কূটনৈতিক চাপে ফেলতে পারে, কারণ দেশটি মার্কিন সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু একইসঙ্গে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন প্রকল্পের বিরোধী।"
মিসর ও জর্ডানের বিকল্প পরিকল্পনা
মিসরের আল-আহরাম সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক আশরফ আল-আশরি জানিয়েছেন, "কোনো আরব দেশই ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের প্রস্তাব মেনে নেবে না। ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত না করে গাজার পুনর্গঠনের জন্য মিসরের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে।"
এই পরিকল্পনার আওতায় তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গাজার পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। পুনর্গঠন শুরু হবে রাফা ও দক্ষিণ গাজা থেকে, এরপর মধ্য গাজা, এবং শেষ পর্যায়ে উত্তর গাজায় কাজ হবে। আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো, ইইউ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জ
বার্লিনের থিংক ট্যাংক জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পিটার লিন্টল মনে করেন, "মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ ও বাস্তবসম্মত নয়।"
তিনি প্রশ্ন তোলেন, "যদি ফিলিস্তিনিরা গাজা ছাড়তে না চান, তাহলে ট্রাম্প কী করবেন? এটি কি জোরপূর্বক বাস্তবায়ন করা হবে? আমেরিকা ও ইসরায়েলের ভূমিকা কী হবে?"
তিনি আরও বলেন, "ট্রাম্পের প্রস্তাবের ফলে গাজায় উত্তেজনা কমবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং, এটি গাজার পুনর্গঠনে আরও দেরি করতে পারে।"
ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আরব দেশগুলো একযোগে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যুত না করেই পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার অস্পষ্টতা এবং আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় না নেওয়ায় এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।