প্যারাসুটের সাহায্যে আকাশ থেকে ভূমিতে অবতরণ করা সম্ভব। তবে বিমানযাত্রীদের জন্য প্যারাসুট সরবরাহ না করার পেছনে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এই প্রতিবেদনে এমন ৫টি কারণ তুলে ধরা হলো:
১. **উচ্চতার সমস্যা**:
অধিকাংশ যাত্রীবাহী বিমান প্রায় ৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ে। এই উচ্চতা স্কাইডাইভিংয়ের জন্য উপযুক্ত উচ্চতার চেয়ে অনেক বেশি। এত উচ্চতায় বায়ুর চাপ অত্যন্ত কম থাকে, যার ফলে প্যারাসুট সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। কম বায়ুচাপের কারণে প্যারাসুট খুলতে সমস্যা হতে পারে, যা যাত্রীদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
২. **ওজন ও জ্বালানি খরচ**:
প্রতিটি প্যারাসুটের ওজন কমপক্ষে ২২ থেকে ৩০ কেজি। একটি বিমানে যদি ১০০ জন যাত্রী থাকেন, তাহলে প্যারাসুটের কারণে মোট ওজন প্রায় ২,৫০০ কেজি বৃদ্ধি পাবে। এই অতিরিক্ত ওজন বহনের জন্য বিমানের আকৃতি ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিমান পরিচালনা করা কঠিন হবে এবং যাত্রীভাড়া প্রায় ৫০% বৃদ্ধি পেতে পারে।
৩. **অর্থনৈতিক ব্যয়**:
একটি প্যারাসুটের দাম সর্বনিম্ন ৪০,০০০ টাকা ধরা হলে, ১০০ জন যাত্রীর জন্য প্যারাসুট সরবরাহ করতে বিমান কোম্পানিকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে। এই বিশাল অঙ্কের টাকা যাত্রীভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হলে, ভাড়ার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এতে সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে বিমান ভ্রমণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
৪. **প্রশিক্ষণের অভাব**:
প্যারাসুট সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য যাত্রীদের প্রশিক্ষণ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। একজন যাত্রীকে কমপক্ষে ৫ ঘণ্টা করে ৩ দিন প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবে সব যাত্রীর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সুবিধা নেই, সবাই শারীরিকভাবে ফিট নন এবং প্রশিক্ষণের জন্য অতিরিক্ত খরচ বহন করতে সক্ষম নন।
৫. **উচ্চতার শারীরিক ঝুঁকি**:
৩৫,০০০ ফুট উচ্চতায় বায়ুর চাপ ও অক্সিজেনের পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকে। এই উচ্চতায় প্যারাসুট নিয়ে লাফ দিলেও যাত্রীরা স্বল্প অক্সিজেনের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারেন বা শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এমনকি ফুসফুস ফেটে যাওয়ার মতো মারাত্মক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই এই উচ্চতায় প্যারাসুট ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব।
এই সমস্ত কারণে বিমানযাত্রীদের জন্য প্যারাসুট সরবরাহ করা হয় না। বিমান দুর্ঘটনার হার অত্যন্ত কম এবং আধুনিক বিমানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই উন্নত যে, প্যারাসুটের প্রয়োজনীয়তা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।