যুক্তরাজ্যের এমপিদের বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে সমালোচনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের দেওয়া একটি বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগ ওঠে যে, প্রতিবেদনটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। এই ঘটনার পর রোববার (১৯ জানুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ প্রতিবেদনটি প্রত্যাহারের খবর প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন ও বিতর্কের মূল কারণ
যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথবিষয়ক অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কড়া সমালোচনা করা হয়। তবে, পরবর্তীতে অভিযোগ ওঠে যে প্রতিবেদনে উল্লেখিত অনেক তথ্য সঠিক নয় এবং পক্ষপাতদুষ্ট।
লেবার পার্টির এমপি রূপা হক হাউস অব কমন্সে প্রতিবেদনটির বিষয়ে আপত্তি জানালে এটি বিতরণ বন্ধ করা হয়।
প্রতিবেদনটির বিষয়বস্তু
প্রতিবেদনটিতে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এতে বলা হয়:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ২০২৩ সালের আগস্টে ক্ষমতা হারান এবং ভারতে আশ্রয় নেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করা হয় এবং বলা হয়, আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কট্টর ইসলামপন্থিদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষদের দমন করার অভিযোগ আনা হয়।
প্রতিবেদন প্রত্যাহারের কারণ
প্রতিবেদনটি ভারতের নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপ এর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু এর বিশ্লেষণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেন, “প্রতিবেদনে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে। এটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং একটি ব্যর্থ বিশ্লেষণ।”
লেবার পার্টির এমপি রূপা হক এটিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কাজ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে প্রতিবেদনটির মিথ্যা তথ্যের বিষয়ে অভিযোগ করেন।
ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের বক্তব্য
এপিপিজি-এর কনজারভেটিভ চেয়ার অ্যান্ড্রু রোসিন্ডেল বলেন, “বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ থাকা উচিত, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সরকারের অব্যাহত পক্ষপাতমূলক আচরণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রত্যাশাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।”
তবে, প্রতিবেদনটি নিয়ে বিতর্কের মুখে বলা হয় এটি শুধুমাত্র একটি অভ্যন্তরীণ নথি এবং এখন পর্যালোচনার জন্য প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞরা প্রতিবেদনটির মিথ্যা তথ্য ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্যদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জবাবদিহিতা ও সঠিক তথ্যের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।