যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তিনি বলেছেন, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আনার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো উচিত। যদিও ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের সময় এখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি, তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কাজ আগেই শুরু করেছেন।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। এর জন্য, তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ অন্তত ২০ বছরের জন্য স্থগিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মতে, যুদ্ধ চলতে থাকলে ইউক্রেন কোনভাবেই জয়ী হতে পারবে না এবং পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থ ও সম্পদ নষ্ট হবে।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান
ডিসেম্বরে, ট্রাম্প ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের দ্রুত যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মতিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘জেলেনস্কি ও ইউক্রেন একটি চুক্তি করে এই পাগলামি বন্ধ করতে রাজি হবে।’ এভাবে তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী, এবং ন্যাটো জোটের ইউরোপীয় সদস্যদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। তিনি মনে করেন, এই যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো অতিরিক্ত ব্যয় করছে, আর চীন বিশ্ববাণিজ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
ন্যাটো ত্যাগের হুমকি
যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা ও যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে বের করার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই মন্তব্য ইউক্রেন, ন্যাটো সদস্যদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মহলকে উদ্বিগ্ন করে তোলে, কারণ এটি যুদ্ধের কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পিছিয়ে দিলে যুদ্ধ বন্ধ হবে না। তারা এই প্রস্তাবকে যথেষ্ট মনে করেননি এবং যুদ্ধের প্রকৃত কারণ ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর গভীরে গিয়ে সমাধান খোঁজার কথা বলেছেন।
জেলেনস্কির সতর্ক বার্তা
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আশা প্রকাশ করেছেন, তিনি রাশিয়াকে শান্তি আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারবেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, যদি ইউক্রেন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পায়, পুতিন আবারও আক্রমণ করতে পারেন।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করতে সহায়তা করেছে, আর রাশিয়া এই যুদ্ধের মাধ্যমে তার ভূরাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণ করতে চাইছে। যুদ্ধের কারণে ডলারের ব্যবহার কমছে এবং রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের একক প্রচেষ্টায় এই যুদ্ধ থামানো কঠিন হতে পারে, কারণ এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে জটিল ভূরাজনৈতিক এবং বহুমুখী দেশ ও শক্তির দীর্ঘমেয়াদি দ্বন্দ্ব।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি
এদিকে, গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা সহিংসতার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির বাস্তবায়নে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক ভূমিকা বিশেষভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। যদিও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও এই চুক্তির সঙ্গে যুক্ত ছিল, তবে ট্রাম্পের কূটনৈতিক চাপ ও রাজনৈতিক প্রভাবকেই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাইডেন প্রশাসন বিদায়ী অবস্থায় থাকলেও ট্রাম্পের জয়লাভের পরই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি সক্রিয়ভাবে এগিয়েছে, এবং ট্রাম্পের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে, চুক্তির বাস্তবায়ন এবং তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে এখনও কিছু সংশয় রয়েছে।