দেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৩০ বছর বয়সী সানজিদা আক্তার নামের ওই নারী মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মৃত্যুর কারণ নিয়ে সংশয়
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার জানিয়েছেন, ওই নারী গত ১২ জানুয়ারি এইচএমপিভি এবং ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এছাড়া, তিনি কিডনি সমস্যা এবং স্থূলতাজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাকে ভেন্টিলেটরে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি এইচএমপিভি ভাইরাসের কারণে সরাসরি মারা গেছেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায়নি।
রোগের প্রাদুর্ভাব এবং সতর্কতা
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, এইচএমপিভি কোনো নতুন ভাইরাস নয়। প্রতিবছরই এ ভাইরাসে দু-চারজন রোগী শনাক্ত হয়। তবে চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশের জন্যও এটি সতর্কতা সৃষ্টি করেছে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচএমপিভি সাধারণত ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (COPD) আক্রান্ত রোগী, গর্ভবতী নারী এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
বর্তমানে এই ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল থেরাপি বা ভ্যাকসিন নেই। রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং রোগের উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন পয়েন্ট অব এন্ট্রিতে স্বাস্থ্যবিধি জোরদার করার পাশাপাশি, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, এইচএমপিভি প্রথম ২০০১ সালে শনাক্ত হয়। তবে গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটি ১৯৫৮ সাল থেকে উপস্থিত থাকতে পারে। এটি ব্রংকাইটিস এবং নিউমোনিয়ার মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মত
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সংক্রমণের মাত্রা এখনো তীব্র নয়। তবে পার্শ্ববর্তী দেশে এর প্রাদুর্ভাব এবং ঝুঁকি বিবেচনায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।