বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বর্তমানে হেপাটাইটিস সি রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুসারে, বর্তমানে পৃথিবীতে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬ কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটিই পাকিস্তানের
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মালিক মুখতার আহমেদ ভারাথ রাজধানী ইসলামাবাদে আয়োজিত একটি সেমিনারে এ তথ্য জানিয়েছেন। সেমিনারটি আয়োজন করেছিল পাকিস্তানি সংস্থা হেলথ ফাউন্ডেশন অন হেপাটাইটিস এলিমিনেশন।
ড. ভারাথ জানান, “বিশ্বে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি আমাদের দেশে। এ রোগ নির্মূলে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব এখন আমাদেরই। যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১ কোটি ১০ লাখে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ১ কোটি ১০ লাখ রোগীর মধ্যে ৫ লাখের বেশি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হবে, ১ লাখেরও বেশি লিভার ক্যানসারে ভুগবে এবং লিভারজনিত জটিলতায় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এছাড়া প্রতি বছর এই রোগের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্ষতি হচ্ছে।”
হেপাটাইটিস সি ও এর প্রভাব
হেপাটাইটিস সি মূলত জন্ডিস ঘরানার একটি ভাইরাস, যা যকৃত বা লিভারকে আক্রান্ত করে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। অল্প কিছু ক্ষেত্রে জ্বর, হলুদ প্রস্রাব, পেটব্যথা এবং ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়, যা অনেক সময় ধর্তব্যে আনা হয় না। এর ফলে ভাইরাসটি নীরবে বংশবিস্তার করে এবং পরবর্তীতে লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার কিংবা লিভার অকার্যকর হওয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো দেশের দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো। ড. ভারাথ জানান, ২০২১ সালে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন।
নির্মূলের পরিকল্পনা
পাকিস্তান সরকার আগামী তিন বছরের মধ্যে হেপাটাইটিস সি নির্মূলের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর জন্য মোট ৬,৭৭৭ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ৩,৪১৫ কোটি রুপি এবং চার প্রাদেশিক সরকার ৩,৩৬১ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে।
প্রকল্পটি পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। সরকার এ লক্ষ্য অর্জনে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্ক্রিনিং কার্যক্রম এবং চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের মতো বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে।