মুসলিম বিশ্বে মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে পাকিস্তানে পৌঁছেছেন দেশটির মানবাধিকার কর্মী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। দীর্ঘদিন পর নিজ দেশে ফিরে তিনি গভীর আনন্দ এবং আবেগ প্রকাশ করেছেন। শনিবার ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নারীশিক্ষা ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে একজন দৃঢ় চ্যাম্পিয়ন হিসেবে পরিচিত মালালা প্রথমবার আলোচনায় আসেন ২০১২ সালে, যখন তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সে তালেবান জঙ্গিদের হামলার শিকার হন। নারীশিক্ষার পক্ষে কথা বলার কারণে সেই সময় পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকায় তালেবান জঙ্গিরা তাকে গুলি করে। গুরুতর আহত মালালাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রিটেনের বার্মিংহামের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে তিনি নারীশিক্ষার জন্য কাজ চালিয়ে যান এবং প্রতিষ্ঠা করেন "মালালা ফান্ড"।
২০২০ সালে মালালা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, দর্শন এবং অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালে, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে তিনি সবচেয়ে কম বয়সী বিজয়ী হিসেবে ইতিহাস গড়েন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ তাকে শান্তির দূত হিসেবে নিয়োগ দেয়।
শনিবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে মালালা বলেন, "পাকিস্তানে ফিরতে পেরে আমি গভীরভাবে সম্মানিত, আনন্দিত এবং অভিভূত।" তার সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তার মা-বাবাও।
এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্মেলনে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বিভিন্ন দেশের শিক্ষা খাতের নেতারা অংশ নেন। তবে পাকিস্তানের প্রতিবেশী আফগানিস্তান এই সম্মেলনে যোগদান থেকে বিরত থাকে। উল্লেখ্য, বর্তমানে আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেন, "মেয়েদের শিক্ষার অধিকার অস্বীকার করা মানে তাদের কণ্ঠস্বর, পছন্দ এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকার কেড়ে নেওয়া।" পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী জানান, আফগান সরকারকে সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তবে তারা সাড়া দেয়নি।
এই সম্মেলনের লক্ষ্য মুসলিম বিশ্বে মেয়েদের শিক্ষার ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।