১১৬ বছর বয়সে মারা গেলেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর ও টাইটানিক জাহাজ ডুবে যাওয়ার আগে জন্ম নেওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, জাপানি নারী টোমিকো ইতুকা, ১১৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তিনি জাপানের হাইগো প্রিফেকচারের আশিয়া শহরের একটি নার্সিং হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে আশিয়া শহরের মেয়র রিয়োসুকে তাকাশিমা জানান, গত রোববার তিনি মারা গেছেন। যদিও মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করা হয়নি, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী বার্ধক্যজনিত জটিলতায় শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মেয়র বলেন, "ইতুকার দীর্ঘ জীবন আমাদের সাহস এবং আশা দিয়ে গেছে। তার প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।"
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে, ১১৭ বছর বয়সে স্পেনের মারিয়া ব্রানিয়াস মোরেরার মৃত্যুর পর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইতুকাকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।
এক অসাধারণ জীবনের ইতিহাস
১৯০৮ সালের ২৩ মে জাপানের ওসাকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন টোমিকো ইতুকা। তার পরিবারে তিন ভাইবোনের একজন ছিলেন তিনি। তার বাবা-মা একটি পোশাকের দোকান চালাতেন। ছোটবেলায় তিনি জাপানের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে উত্থান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিজয় এবং এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে জাপানের সম্প্রসারণ প্রত্যক্ষ করেন।
তার জন্মের সময় জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে জাপান কোরীয় উপদ্বীপের দখল স্বীকৃতি পায়। জীবদ্দশায় তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধসহ জাপানের বিভিন্ন সময়ের উত্থান-পতন দেখেছেন।
বিশ্বযুদ্ধের আগে তিনি জাপানি টেক্সটাইল কোম্পানির মালিক কেনজি ইতুকাকে বিয়ে করেন। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি জাপানে থেকে ব্যবসা পরিচালনা করেন, আর তার স্বামী কোরিয়ায় একটি কারখানার তত্ত্বাবধান করতেন।
৫১ বছরের বিবাহিত জীবনের পর, ১৯৭৯ সালে স্বামী মারা গেলে তিনি আশিয়া শহরে চলে যান।
এক অনুপ্রেরণাদায়ক জীবনধারা
টোমিকো ইতুকা শুধু দীর্ঘায়ু নয়, তার জীবনধারায়ও ছিলেন অনন্য। সত্তরের দশকে তিনি মাউন্ট ওনটেক পর্বতে দু’বার আরোহণ করেন। হাইকিং বুটের পরিবর্তে স্নিকার্স পরে পর্বতে ওঠায় গাইডকেও চমকে দেন তিনি।
১০০ বছর বয়সেও লাঠি ছাড়াই পাথুরে পথ পাড়ি দিয়ে আশিয়ার একটি তীর্থস্থানে পৌঁছেছিলেন।
একটি প্রজন্মের সাক্ষী
টোমিকো ইতুকার জীবনে জাপান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি থেকে শিল্পখাতে পরিণত হওয়া এবং একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পুনরুত্থান ঘটানোর সাক্ষী হয়েছে। তার দীর্ঘ জীবন এবং অভিজ্ঞতা আজও প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণা।