শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পঞ্চগড়, দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ
শীতের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে, আর তাপমাত্রার পারদ নেমে যাচ্ছে ১০ ডিগ্রির নিচে। বছরের শুরুতেই উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। বিশেষ করে দুই দিন ধরে চলা তীব্র ঠান্ডায় নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে জেলার হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
তাপমাত্রার রেকর্ড ও শৈত্যপ্রবাহ
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসও রেকর্ড হয়েছিল এই জেলায়। আবহাওয়াবিদদের মতে, ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকে। হিমালয়ের হিম বাতাস সরাসরি প্রবাহিত হওয়ায় এই অঞ্চলে ঠান্ডার প্রকোপ আরও বেশি।
দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ
শৈত্যপ্রবাহের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেও শীতের তীব্রতা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। কর্মজীবী মানুষেরা শীতবস্ত্র গায়ে দিয়ে কঠোর ঠান্ডার মধ্যেই জীবিকার তাগিদে কাজে বের হচ্ছেন।
খেত চাষ করতে যাওয়া আজিজুল বলেন, "প্রচণ্ড ঠান্ডা, হাত-পা কুঁকড়ে আসছে। তারপরও কাজ না করলে সংসার চলবে না।" একই ধরনের দুর্ভোগের কথা বলেছেন ভ্যানচালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক ও দিনমজুররা। তাদের মতে, পেটের ক্ষুধা শীত বোঝে না।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও হাসপাতাল ভর্তির চাপ
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসকরা সুরক্ষিত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন, তবে শীতের প্রকোপে তাদের দুর্ভোগ কমছে না।
সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারিভাবে ৩০,০৭৫টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ জানান, ভোরের দিকে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে সকালে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়ছে।
শৈত্যপ্রবাহে পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে, যেন শীতার্ত মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব হয়।