ঢাকা মহানগরে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন: আইন অমান্য ও আতশবাজি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ
২০২৫ সালের থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকে ঘিরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) আগেই ১১ দফা নির্দেশনা দিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করেছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ফানুস ওড়ানো এবং পটকা ও আতশবাজি ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উদযাপন চলে।
নগরজুড়ে আতশবাজি ও ফানুস উৎসব
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ৩১ ডিসেম্বর রাতে মিরপুর, গুলশান, বনানী, রামপুরা, শান্তিনগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছাদে ছাদে ফানুস ওড়ানো এবং আতশবাজি ফোটানোর দৃশ্য দেখা যায়। এতে অনেক বাসিন্দার মধ্যে আগুন লাগার আতঙ্ক তৈরি হয়।
মিরপুরের এক বাসিন্দা উম্মে সুরাইয়া বলেন, "আমার তিন মাসের শিশুকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ফানুসের কারণে আগুন লাগার ভয় তো আছেই, সঙ্গে আতশবাজির বিকট শব্দ বাচ্চার ওপর প্রভাব ফেলছে।"
বনানীর বাসিন্দা মিনহাজ আবেদীন বলেন, "নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও প্রায় প্রতিটি বাসার ছাদে আতশবাজি চলছে। পুলিশের আরও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে এসব পণ্য তৈরি ও বিক্রির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করা উচিত।"
ডিএমপির প্রস্তুতি ও নাগরিক সচেতনতার অভাব
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানান, নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আগেই অভিযান চালিয়ে ১২৭ কেজি আতশবাজি, পটকা, ক্লাস্টার বোমা জব্দ করা হয়। তবে নাগরিকদের সচেতনতা এবং আইন মেনে চলার অভাব প্রকট।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, "আমরা বারবার সচেতনতা প্রচার করেছি, কিন্তু শিক্ষিত শ্রেণি থেকেও আইন অমান্যের ঘটনা ঘটেছে।"
নির্দেশনাগুলোর সারাংশ
ডিএমপির নির্দেশনায় বলা হয়েছিল:
1. অনুমতি ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশ করা যাবে না।
2. ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত আতশবাজি, পটকা ও ফানুস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
3. বাসাবাড়ি বা হোটেলে সীমিত আকারে অনুষ্ঠান করা যাবে।
4. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাত ৮টার পর প্রবেশের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক।
5. উচ্চ শব্দে গান বা গাড়ির হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ।
সমস্যার মূল কারণ ও সমাধান
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, সীমান্ত এলাকা থেকে পটকা ও আতশবাজি আসা বন্ধ করতে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। একই সঙ্গে বিক্রয় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
পুলিশ বলছে, নাগরিকদের সহযোগিতা ও সচেতনতা ছাড়া শুধু আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে আইন অমান্যের এই প্রবণতা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নয়, বরং নাগরিক অসচেতনতারও বহিঃপ্রকাশ। পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের যৌথ প্রচেষ্টাই কেবল এই সমস্যাকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারে।