১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কেপ ভের্দের বিশ্বকাপ ইতিহাস: ব্যাংকার থেকে তারকা

শেয়ার করুন

ফুটবল বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর অর্জন হিসেবে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে আফ্রিকার ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র কেপ ভের্দে। জনসংখ্যা ও আয়তনের বিচারে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ, অথচ মাঠে তারা লিখে ফেলেছে নতুন এক ইতিহাস। ঘরের মাঠে এস্বাতিনিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে তারা নিশ্চিত করেছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত ওয়ার্ল্ড কাপের টিকেট।

একসময় পর্তুগালের অধীনে থাকা কেপ ভের্দে ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথম অংশ নেয় তারা। তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের ফুটবল শক্তি বাড়াতে থাকে। ২০১৩ ও ২০২৩ সালে আফ্রিকা কাপ অব নেশনসের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল দলটি। এবার সেই ধারাবাহিকতায় তারা পৌঁছে গেছে বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে—ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে।

এই ঐতিহাসিক অর্জনের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন দলের তারকা খেলোয়াড় পিকো লোপেস। তার জীবনগাথা যেন রূপকথার মতো। ৩৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার একসময় ছিলেন আয়ারল্যান্ড আন্ডার-১৯ দলে, পাশাপাশি ব্যাংকে মর্টগেজ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। ফুটবলে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৭ সালে, যখন তিনি আয়ারল্যান্ডের ক্লাব শ্যামরক রোভার্সে যোগ দেন। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন পূর্ণকালীন ফুটবলার, জেতেন চারটি লিগ শিরোপা এবং ইউরোপীয় মঞ্চেও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

লোপেসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ডাবলিনে। তার মা আয়ারল্যান্ডের, বাবা কেপ ভের্দের নাগরিক। তাই শুরুতে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হওয়ার কথা ছিল আয়ারল্যান্ডের হয়ে। কিন্তু ভাগ্য ঘুরে যায় ২০১৯ সালে—যখন কেপ ভের্দে জাতীয় দলের তৎকালীন কোচ রুই আগুয়াস তাকে লিঙ্কডইনে বার্তা পাঠান। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন এটি কোনো প্রাঙ্ক বা মজা। পরে সাহস করে উত্তর দেন, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়।

২০১৯ সালের অক্টোবরে টোগোর বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচে কেপ ভের্দের হয়ে অভিষেক হয় লোপেসের। সেদিন থেকেই তার জীবন ও ক্যারিয়ার দুই-ই পাল্টে যায়। স্কাই স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
“আমি তখন দ্বিধায় ছিলাম। ভাবছিলাম হয়তো কেউ মজা করছে। কিন্তু অহংকার ত্যাগ করে বার্তার জবাব দিয়েছিলাম—আর সেটিই আমার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত।”

দলে যোগ দেওয়ার পর তার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল ভাষাগত বাধা। কেপ ভের্দে দলে প্রধান ভাষা পর্তুগিজ ও কেপ ভের্দিয়ান ক্রিওল, যা তিনি জানতেন না। তবে সতীর্থদের সহায়তায় সেই সমস্যাও কাটিয়ে ওঠেন।
“যখন আমি সেখানে পৌঁছাই, সবাই খুব সহায়ক ছিল। যারা ইংরেজি জানত, তারা ইংরেজিতেই কথা বলত এবং আমাকে বুঝতে সাহায্য করত,” বলেন লোপেস।

পিকো লোপেসের নেতৃত্বে শ্যামরক রোভার্স গত ছয় মৌসুমে পাঁচটি লিগ শিরোপা এবং ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো কাপ জয়ের স্বাদ পায়। এখন তার হাত ধরেই কেপ ভের্দে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম লিখে ফেলেছে—একটি দেশ, যার ফুটবল স্বপ্ন শুরু হয়েছিল লিঙ্কডইনের একটি বার্তা দিয়ে, আর শেষ হলো বিশ্বকাপের মঞ্চে পৌঁছানোর গৌরবে।

শেয়ার করুন