১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার
৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশজুড়ে ফুলের সুবাস ছড়াতে প্রস্তুত গদখালী

শেয়ার করুন

ফুলের রাজধানী গদখালীতে বসন্তের রঙ, ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব ও মহান মাতৃভাষা দিবস সামনে রেখে রঙে-রঙে সেজেছে ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী। এরপরই আসছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখ। এসব উৎসব ঘিরে চাঙা হয়ে উঠেছে ফুলের বাজার, আর কৃষকদের মুখে ফুটেছে স্বপ্নের হাসি।

এবারের ফুলের ব্যবসা ১০০ কোটি টাকা ছুঁতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে কিছুটা সংশয়ও রয়েছে, কারণ এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও শবে বরাত একই দিনে পড়েছে। পাশাপাশি, বাজারে ফুলের সরবরাহ বেশি থাকায় এখনো দাম তুলনামূলক কম।

গদখালীর বর্ণিল ফুলের রাজ্য

গদখালীর ফুলের মাঠ এখন উৎসবের আমেজে ভরপুর। মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে রজনীগন্ধা, গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ও চন্দ্রমল্লিকা। পানিসারার “ফ্লাওয়ার জোন”-এ ফুলের তোড়া, মালা আর বাহারি সাজসজ্জা দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো পর্যটক।

পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম জানান, তিনি জারবেরা ও গোলাপ চাষ করেছেন। এবার ফুলের উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দাম তুলনামূলক কম। তবে তিনি লাভের ব্যাপারে আশাবাদী।

পানিসারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি গোলাপ, জারবেরা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা চাষ করেছেন এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান ব্যবসার দিন হিসেবে দেখছেন। ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে দেশের নানা প্রান্তের পাইকাররা গদখালীতে ভিড় করেন এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই মূল কেনাবেচা সম্পন্ন হয়।

আবহাওয়া ও চাহিদার প্রভাব

চাষিরা জানিয়েছেন, এবারের গরম বেশি হওয়ায় গোলাপ দ্রুত ফুটে গেছে, ফলে কৃষকরা আগেই ফুল কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে দাম কিছুটা কম হলেও ব্যাপক সরবরাহের কারণে মোট লাভ ভালোই হবে বলে মনে করছেন তারা।

এছাড়া, একটানা বৃষ্টির কারণে গ্লাডিওলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার অধিকাংশ কৃষক একসঙ্গে বিভিন্ন ফুল চাষ করেছেন। এর ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, যা দাম কম থাকার অন্যতম কারণ।

ফুলের বাজার ও সম্ভাবনা

গদখালী ফুলচাষি ও ফুলব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, ১০ ফেব্রুয়ারিতে ফুলের দাম তুলনামূলক কম ছিল।

১০ ফেব্রুয়ারি দাম:

১০০ পিস রজনীগন্ধা – ৪০০-৫০০ টাকা

১০০ পিস গোলাপ – ৮০০-৯০০ টাকা

গ্লাডিওলাস – ৪০০-৭০০ টাকা

জারবেরা – ৭০০-১০০০ টাকা

চন্দ্রমল্লিকা – ২০০-২৫০ টাকা

 

তিনি আশা করছেন, ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিটি ফুলের দাম বাড়বে। বিশেষ করে গোলাপ ৩০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস উঠতে পারে, এবং রঙ অনুযায়ী গ্লাডিওলাসের দাম ৮-২০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এবছর যশোরের ফুলচাষিরা ১০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যে চাষ করেছেন। জেলার ১,৫০০ হেক্টর জমিতে ৬,৫০০ কৃষক ফুল চাষ করেছেন।

গদখালীসহ ঝিকরগাছা উপজেলার ৫৫টি গ্রাম

যশোর সদর, ঝিকরগাছা, শার্শা ও কেশবপুর – মোট ৭৫টি গ্রাম

এখানকার ফুল সারা দেশে সরবরাহ হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩০% ফুল যায়, বাকি ৭০% দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়, যার মধ্যে পার্বত্য এলাকা, দ্বীপভোলা ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো রয়েছে।

গদখালীতে উৎসবের আমেজ

মূল উৎসবের আগেই গদখালী ও পানিসারা উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছেন ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

পর্যটকদের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফুলের পার্ক, বিভিন্ন রাইড ও বিনোদন কেন্দ্র নিয়ে জমজমাট গদখালী-পানিসারা। সব মিলিয়ে বসন্তের আনন্দে রঙিন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী।

 

শেয়ার করুন