১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বায়ুদূষণে বছরে দেশে মৃত্যু লক্ষাধিক : গবেষণা

শেয়ার করুন

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের ভয়াবহতার কারণে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ দুই হাজার ৪৫৬ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) যৌথভাবে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রধান তথ্য ও প্রভাব:
১. বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৯ লাখ মায়ের অকাল প্রসব হয় এবং ৭ লাখের বেশি কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করে।
২. জরুরি বিভাগে বছরে ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী ভর্তির প্রয়োজন হয়।
৩. বছরে মোট ২৬৩ মিলিয়ন কর্মদিবস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার আর্থিক ক্ষতি জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ (১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
৪. ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ দূষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বায়ুমানের গড় সূক্ষ্ম বালুকণা (PM2.5) প্রতি ঘনমিটারে ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যা জাতীয় মানদণ্ডের দ্বিগুণ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্দেশিকার তুলনায় ১৫ গুণ বেশি।

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ফলাফল:

বায়ুদূষণের কারণে শিশু ও বয়স্কদের জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।

৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও প্রকট আকার ধারণ করছে।

গবেষণার সুপারিশ:
১. জাতীয় নির্দেশিকা বাস্তবায়ন: বর্তমান মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) পূরণের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
২. WHO নির্দেশিকা গ্রহণ: মাঝারি মেয়াদে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম এবং দীর্ঘমেয়াদে ৫ মাইক্রোগ্রাম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
3. পরিবেশবান্ধব জ্বালানি: কয়লা ও ডিজেলের মতো জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে হবে।
4. শিল্প নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ: যানবাহন ও কলকারখানার নির্গমন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
5. উন্নত পর্যবেক্ষণ কাঠামো: ভূমিভিত্তিক ও স্যাটেলাইট ডেটা একত্রিত করে জাতীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

বিশেষজ্ঞ মতামত:
সিআরইএর বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান ও ড. জেমি কেলি মনে করেন, বায়ুমানের সামান্য উন্নতিও দেশের জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ক্যাপস চেয়ারম্যান ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, বায়ুদূষণের কারণে শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বায়ুদূষণের মাত্রা কমাতে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। এটি শুধু জনস্বাস্থ্যের উন্নতি নয়, অর্থনীতির স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।

 

শেয়ার করুন